
মানুষের হৃদের সঙ্গে মানুষের হৃদয়ের চিরকালীন যোগ সাধনের চেষ্টাই তাঁর সাহিত্যের প্রধান উদ্দেশ্য। আর এখানেই জ্ঞান সাহিত্যের চেয়ে অপ্রয়োজনীয় সাহিত্যের গুরুত্ব বেসি।যা জ্ঞানের কথা তা প্রচার হয়ে গলেই তাঁর উদ্দেশ্য সফল হয়ে শেষ হয়ে যায়। মানুষের জ্ঞান সন্মন্ধে নুতুন আবিষ্কারের ধারনা পুরাতন আবিষ্কারে আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে। কাল যা পন্ডিতের কাছে অগম্য ছিল, আচ তা অর্বাচিন বালকের কাছে নুতুন নয়। কিন্তু হৃদয় ভাবের কথা প্রচারের দ্বারা পুরাতন হয় না। জ্ঞানের কথা একবার জানলে আর জানতে হয়না, কিন্তু ভাবের কথা বারবার অনুভব করেও শান্তি হয় না । আসলে জ্ঞান নয় হৃদয়ের ভাবটিই প্রকৃতপক্ষে সাহিত্যের সামগ্রী ।
সূর্য যে পূর্ব দিকে ওঠে এটা কথা আর আমাদের আকর্ষন করেনা , কিন্ত সূর্যদোয়ের যে সৌন্দর্য ও আনন্দ তা আমাদের কাছে আম্লান। আমনকি আনুভূতি যতো প্রাচীনকাল থেকে যত লোক পরম্পরার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আসে ততই তাঁর গভীরতা বৃদ্ধি পায়, যদি মানুষ আপনার কোনো জিনিস মানুষের কাছে উজ্জ্বলভাবে, নিবিরবাভে অমর রাখতে চায়, তবে তাকে ভাবের কথাই আশ্রয় করতে হবে । তাই রবীন্দ্রনাথ যর্থাথ বলেছেন-" সাহিত্য অবলম্বন জ্ঞানের বিষয় নহে ভাবের বিষয়."
জ্ঞানের জিনিসকে এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় হস্তান্তর করা চলে। মূল রচনা থেকে উদ্ধার করে তাকে আন্য রচনার মধ্যে নিবিষ্ট করলে অনেক সময় তার উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। বিষয়টি নানা লোকে নানা ভাষায় নানা রকম ভাবে প্রচার করতে পারে। কিন্তু ভাবের বিষয় সমন্ধে এ কথা খাটে না । ভাব যে মূর্তিক আশ্রয় করে, তা থেকে আর বিছিন্ন হতে পারে না। কারন " জ্ঞানের কথাকে প্রমান করিতে হয়, আর কথাকে সঞ্চার করিয়া দিতে হয়। আর জন্য নানা প্রকার আভাস- ইঙ্গিত ও নানা ছলাকলার প্রয়োজন।
ভাবকে কেবল বুঝিয়ে বললেই হয় না, তাকে সৃষ্টি করে তুলতে হয় । এই কলা কৌশলপূর্ন রচনাই যেন ভাবের দেহ। এই দেহের ম্মধ্যে ভাবের প্রতিষ্ঠাতেই রয়ছে সাহিত্যকের পরিচয়।
জ্ঞান জগৎ-সত্যকে ভিত্তি করে গড়ে উঠে। এই জ্ঞান আমাদের বুদ্ধির অধিগম্য বিষয়,তাকে ব্যাক্তি বিশেষের নিজত্ব বর্জিত গড়ে তোলাই একান্ত প্রয়োজন কারন জ্ঞান হলো সত্য, আর সত্য সর্বাঙ্গে ব্যাক্তি নিরপেক্ষ, সুভ্রনিরঞ্জন আর মধ্যাকর্ষন তত্ত্ব এক জনের কাছে যেমন , আপর সবার কাছেও একই রকম ; তাঁর উপর বিচিত্র হৃদয়ের নুতুন নুতুন রঙ্গের ছায়া পড়বার জো-নেই। সাহিত্য কিন্তু তা নয়। সাহিত্য আবিষ্কার, অনুকরন নয় তা সৃষ্টি । একবার প্রকাশিত হলে তাঁর না রূপান্তর না আবস্থান্তর করা চলে না । এখানে ভাবের বিষয় মূখ্য বলেই এর রীতি এই প্রকার তাই একথা বলা যায় " সাহিত্যের প্রধান আবলম্বন জ্ঞান নয় ভাবের বিষয়।"
0 Comments