মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা 'হারানের নাতজামাই' গল্পটির নামকরনের সার্থকতা বিচার কর। (হারানের নাতজামাই গল্পের প্রশ্ন উত্তর)

 মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা  'হারানের নাতজামাই' গল্পটির নামকরনের সার্থকতা বিচার কর।

           
                                                          হারানের নাতজামাই বড়ো প্রশ্ন
                                

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা  'হারানের নাতজামাই' গল্পটির নামকরনের সার্থকতা বিচার কর।
হারানের নাতজামাই


                                  সাহিত্যে নামকরন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন বিষয়। নামকরণ বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে -কখনো তা চুরিত্রধর্মী, কখনো বিষয়ধর্মী আবার কখনো হয়ে থাকে ব্যাঞ্জনাধর্মী । আলোচ্য মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'হারানের নাতজামাই' গল্পটির নামকরণ ব্যাঞ্জনাধর্মী নামকরণের সার্থক দৃষ্টান্ত। গল্পটি নিশ্চিত ভাবে তেভাগা আন্দোলনের জটিল প্রেক্ষাপটে  শোষিত, নির্যাতিত, সর্বহারা মানুষের চরম দুর্দশার কাহিনী নিয়ে রচিত। সমগ্র  গ্রামে ময়নার মা, ময়মা, সমস্ত গ্রামবাসীর দৃঢ প্রতিবাদী মনোভাব এবং শেষে নাতজামাই জগমোহনের প্রবলতম প্রতিবাদী মনের প্রতক্ষ প্রকাশে সর্বহারা মানুষের জয় এনে দিয়েছেন । তাই গল্পকার নামকরনের প্রতিবাদী নারী ময়নার মা বা বিপ্লবী ভূবন মণ্ডলকে গুরুত্ব না দিয়ে হারানের নাতজামাইকে   প্রাধান্য দিয়ে প্রতিকী ব্যাঞ্জনা দান করেছে ।


                            'হারানের নাতজামাই' গল্পটির নামকরন অত্যন্ত ব্যাঞ্জনাধর্মী । লেখক এই গল্পের কেন্দ্রিয় চুরিত্র ময়নার মা-র নামে গল্পের নামকরন করতে পারতেন , কিন্তু তা হতো আপেক্ষাকৃত অনেক কম ব্যাঞ্জনাময় । তাই লেখক 'হারানের নাতজামাই ' নামকরনের ব্যাখ্যা মূলক দৃষ্টান্তের আশ্রয় নিয়েছেন।গল্পের দেখা যায় বিপ্লবী ভূবন মণ্ডল হারান মণ্ডলের গৃহে হারানের নাতজামাই জগমোহনের ভূমিকায় অভিনয় করে পুলিশকে ফাঁকি দিয়েছেন। আবার গল্প শেষে জগমোহনের প্রকৃত নাতজামাই হয়েই গল্পের এক ব্যাঞ্জনা এনে দেয় । সে প্রকৃত নাতজামাই রুপে হাজির হয়েই পুলিসকে বিভ্রান্ত করে। এই দুই ভূমিকা হারানের নাতজামাইয়ের মধ্যে উপস্থিত বলে গল্পটির এই রূপ নামকরন সার্থক।

                        

                           

                              আলোচ্য নামকরণটির আরও একটি ব্যাখ্যা আছে গল্পটি জগমোহনের প্রতিবাদী সক্রীয়তা দিয়ে শেষ হয়েছে। ঘটনাক্রমে সে ভূবন মণ্ডলের চুরিত্র বুঝতে পাড়ে, শাশুড়ির সত্য ভাষনে বিশ্বাস রেখে স্ত্রীর  প্রতি একটা বিশ্বাস নিজের ভেতর থেকেই খুজে পেয়েছেন । এই বিশ্বাস  কিন্তু সাধারণ বিশ্বাস নয়;তাই জগমোহন পুলিশের মুখ থেকে তাঁর স্ত্রী সম্পকৃত অশ্লীল ব্যঙ্গ বিদ্রূপ শুনে একজন সাধারণ জামাই হয়েই সে বাড়ী ফিরে যেতে পাড়ে না । নুতুন এই বিশ্বাস তাঁর কাছে এক দুর্লভ পুর্নজন্মের মতো। তাই সে শাশুড়ির সঙ্ঘে সেই একই রাজনৈতিক আর্বতে জড়িয়ে পড়ে। গল্পের শেষতম মোক্ষম প্রতিবাদী ধ্বনিটিও তাই আমরা তাঁর মুখ থেকে উচ্চারিত হতে দেখি। পুলিশের কাছ থেকে স্ত্রী ময়নাকে আড়াল করে গর্জিত কণ্ঠে সে বলে উঠে -"মুখ সামলাইয়া কিথা কইবেন।" ঠিক এই মুহূর্তে আমরা জগমোহনের মধ্যে এক অভাবি রুপান্তরকে প্রতক্ষ করি। নাতজামাই জগমোহন গল্পের শেষে এক বিপ্লবী বিশ্বাসী  নুতুন চুরিত্র রুপে আমরা সামনে হাজির হয়। ফলে তাঁর চুরিত্রগত রুপান্তর নামকরণটি এত তাৎপর্যবাহী হয়ে পড়ে ।  



                       'নাতজামাই' শব্দ ব্যাবহারে একটা সন্মান আদরের, সরস  কৌতুকে ভাব থেকে, যা শুধু মাত্র জামাই শব্দ ব্যবহারে নেই। তাই 'নাতজামাই' শব্দের এই কৌতুকটিকে লেখক শ্লেষের সঙ্ঘে গল্পের নামকরনে  ব্যবহারে করেছেন। পুলিশ ও প্রতিপক্ষের কাছে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই নাতজামা-ই ।গ্রামের দিক একটি পরিবারের  পরিচয় প্রতিষ্ঠিত হয় 

গৃহকর্তাকে দিয়ে তাই হারানের নাতজামাই বলা যত স্বাভাবিক , ময়নার 'বর' বা ময়নার মা- এর জামাই বলা ততটা স্বাভাবিক নয়, নামাজিক স্বীকৃতি  দিক থেকেও তা অসংঙ্গত হয়।



       'জুমিদার দর্পন' নাটকে নূরুন্নেহার চুরিত্র বিশ্লেষণ করো।

                                    একাঙ্ক নাটক কাকে বলে ? একাঙ্ক নাটকের আঙ্গিকগত বিশিষ্ট্যের পরিচয় দাও। একটি সার্থক বাংলা একাঙ্ক নাটকের আলোচনা করো ।

       ' চিত্র ও সংগীত সাহিত্যের প্রধান উপকরণ '(রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য)- আলোচনা করো।


'হারানের নাতজামাই' গল্পে আমরা দেখি -নানা ঘটনা, আবস্থা, পরিবেশ ও বাহ্যিক- মানুষিক - প্রতিঘাতে একটা মানুষ নুতুন করে বিপ্লবের দীক্ষা পেলো। নুতুন বিপ্লববাদে দীক্ষিত সেই মানুষ জগমোহন এই গল্পের ভবিষৎ বিপ্লবী শক্তির অন্যতম নায়ক রুপে উদ্ভাসিত হয়ে উঠে। তাই গল্পের নামকরণটি প্রকৃত আর্থেই ব্যাঞ্জনা ধর্মী। হারানের নাতজামাই গল্পের এই রূপ নামকরন নিসন্ধে সার্থক অসঙ্গত হয়েছে।

Post a Comment

0 Comments