একাঙ্ক নাটক কাকে বলে ? একাঙ্ক নাটকের আঙ্গিকগত বিশিষ্ট্যের পরিচয় দাও। একটি সার্থক বাংলা একাঙ্ক নাটকের আলোচনা করো ।


                                  একটি সার্থক একাঙ্ক নাটক
একাঙ্ক নাটক কাকে বলে ?
 একাঙ্ক নাটক কাকে বলে ?


                ছোটোগল্পের মতো একাঙ্ক নাটকেও বিশ শতকের বিশেষভাবে চর্চিত ও সমাদৃত একটি শিল্পরূপ । নাট্যসমালোচক ডঃ অজিত কুমার ঘোষ একাঙ্ক নাটক সর্ম্পকে বলেছেন    - " একাঙ্ক নাটকের মধ্যে চলমান জীবনের  একটা বিশেষ মুহূত্ব হঠাৎ আলোর ঝল্কানির মতো ঝলসে ওঠে । সেই মুহূতেরই কোন ঘটনা , কোন সম্যসা, অথবা কোন ভাব অবলম্বনে নাট্যক্রিয়ার মধ্য দিয়ে উপস্থাপিত হয়। "


                          ছোটগল্প যেমন এক স্বতন্ত্র শিল্পরূপ, তেমনি একাঙ্ক নাটকও একটি স্বয়ং সম্পুর্ন নাটক, পাঁচ আঙ্কের নাটকের সংক্ষিপ্ত সংঙ্করন নয়। একাঙ্ক নাটক একটি  আঙ্ক এবং বস্তু পক্ষে দৃশ্যের সম্পুর্ন নাটক। দৃশান্তর- এ নাটকের রসনিবীড়তাকে ক্ষুন্ন করে বলে এই দৃশ্য , একটি স্থানে একই মঞ্চসজ্জায় জীবনের একটি ক্ষুদ্র অথচ চমকপ্রদ খণ্ডাংশকে এক সুনিবিড় অখন্ডতা দিত হয় । একটি দৃশের পরিনতি নির্দেশ করতে হয় । একটি বিশেষ ঘটনাকে আশ্রয় করে , স্বল্পপরিসরে একাঙ্ক নাটক তাঁর climax-এ পৌছায় । একাঙ্ক নাটোক সম্পর্কে অজিত কুমার ঘোষ বলেছেন --" ... নাট্যপ্রক্রিয়ার প্রথম অংশ হচ্ছে complication অথবা জটিলতা এবং দ্বিতীয় অংশ হচ্ছে denouement অথবা জটিল মোচন । এই দুটি অংশ বৃত্তের তিনটি স্তর অবলম্বন করে যথা অদি ,মধ্য ও অন্ত্য , অদিস্তরে সমস্যার উপস্থাপনা , দ্বিতীয় স্তরে তার বিবর্তন বা জটিলতা এবং তিতীয় স্তরে সমস্যার সমাধআনহীন ও প্রীতিকার - পরিনতি।"


          একাঙ্ক নাটকের রূপ ও রীতির উল্লেখযোগ্য কয়কটি বৌশিষ্ট্য হল -


   ১ঃ এক অঙ্কের পরিসরে সংক্ষিপ্ত কালসীমায় একটি সামান্য বিষয়ের নাট্যরুপেই একাঙ্ক নাটক।

 
   ২ঃ এক অঙ্কের একাধিক দৃশ্য থাকতে পারে। তবে দৃশ্যবিভাগ -এর গঠন সংহতির পক্ষে বাঞ্চনীয় নয়। 


   ৩ঃ একটি মাত্র সংক্ষিপ্ত কাহিনী একমুখী গতিতে দ্রুত চরম পরিনতি মুহূর্তের দিকে ছুটে চলে। তাই এই নাটকের কাহিনী শুরু হয় climax-এর কাছাকাছি কোন বিন্দুতে। 


   ৪ঃ এখানে একটি মূল চরিত্র-ই প্রধান্য পায়। তবে চরিত্র সংখ্যা ৪/৫ এর অধিক  না হওয়াই বাঞ্চনীয়।


   ৫ঃ এখান স্থান, কাল, পাত্রের সুসমঞ্জস্য ঐক্য থাকা বিধেয়। 

 
   ৬ঃ র্পূনাঙ্গ নাটকের মতো একাঙ্ক নাটক ক্রমোন্মচিত হয় না । শুরু থেকেই বাহূল্য বর্জিত ভাবে দ্রুত গতিতে জটিলতা সৃষ্টি করে climax- এ পৌচ্ছায়।



                                     একটি বাংলা একাঙ্ক নাটক


                       নাট্যকার তুলসী লাহিড়ীর একটি উল্লেখ্যযোগ্য একাঙ্ক নাটক "দেবি"। "দেবি" নাটকের স্থান, কাল, ও পরিবেশ অভিনবত্ব থাকলেও আর মূল সমস্যাটি হলো অভাবগ্রস্থ মানুষের বাঁচার আশায় মৃত্যু বরন। শুধু কেবনল দুটি টাকার আশায় বুউড়ী মেয়ে শুখনী বাঘের ভয়ে উপেক্ষে না করে গভীর অন্ধকারে সাহেবদের ডাক বাংলায় এসেছে। অবুঝ ছেলে দুটিকে খেতে দিতে হবে। অশান্ত বুড়টির ক্ষুধাকেও শান্ত করতে হবে । তাই না এসে উপায় নেই। 


                    শুখনী দুটো টাকা হাতে যখন পেলো তখন তাঁর মনে অনেক আশা । কয়েকটি প্রানীকে পেট ভরে খেতে দেবার স্বপ্ন । কিন্তু সব আশা আর স্বপ্ন এক নিমেশে ফুরিয়ে গেল যখন টাটকা রক্তের  সিঁদুরে টাকা দুটি লাল হয়ে উঠল । বাউড়ী মেয়ে হয়ে উঠল দেবী-স্নেহ-মমতায়, নিভীক প্রয়াসে ও বীরত্বপূর্ন সংগ্রামে।

 

                                 কাহিনীটির নাট্যরস জমে উঠছে রহস্যময় পরিবেশের রস সৃষ্টিতে । নিবির রাত, নির্জন  ডাকবাংলা , বাঘের ভয়ে থমথমে অরন্য প্রকৃতি , জোৎস্নার ঝিকিমিকি  -এই পরিবেশে একদিকে বাঘিনীর আবির্ভাব প্রত্যাশায়  আতঙ্ক, অন্য দিকে এক যৌবন চঞ্চলা নারীর মোহময়ী আকর্ষণ । এই ভয় ও মোহ দুই বিচিত্র রসের প্রভাব নাট্য ঘটনাটির মধ্যে জাগিয়ে তুলে নাট্যকার এক বাস্তব অথনৈতি সমস্যার দিকে ঘটনাটিকে টেনে নিয়ে গেলেন । এরই ফলে নাটকের মধ্যে এক সুতীব্র কৌতহল জাগ্রত থাকে এবং আকস্মিক ভাবে এক পরিবেশে বিচ্ছিন্ন বাস্তব সমস্যার , মাধম্যে নাটকের পরিণতি ঘটায় নাট্যরসও ঘনীভূত হয়ে ওঠে।

Post a Comment

0 Comments